রিসার্চ এর কাজ শুরু করার প্রথম যেই প্রশ্ন মাথায় আসে সেটা হচ্ছে, রিসার্চ তো করব কিন্তু কি নিয়ে রিসার্চ করব? রিসার্চ করার জন্য কম্পিউটার সায়েন্স ফিল্ড এ অনেকগুলো ভালো ভালো টপিক আছে। যেটিতে আপনার আকর্ষন থাকবে এবং আপনি যেটা নিয়ে কাজ করে সন্তষ্ট হবেন বলে আপনি মনে করেন, সেই টপিক টা নিয়েই কাজ করার চেষ্ঠা করুন। আমি কম্পিউটার সায়েন্স এর কিছু রিসার্চ টপিক নিয়ে লিখার চেষ্ঠা করব। আসলে রিসার্চ এবং থিসিস দুইটির মদ্ধ্যে পার্থক্য হচ্ছে যে থিসিস আপনার একজন সুপারভাইজর এর আণ্ডারে করতে হবে, কিন্তু রিসার্চ এর ক্ষেত্রে সেইরকম কোন বাঁধাধরা নেই। আপনি নিজে নিজেই একটি রিসার্চ এর কাজ করতে পারেন। কিন্তু সবসময় একজন সুপারভাইজর এর আণ্ডারে কাজ করা ভালো। আসলে কম্পিউটার সায়েন্স এর ব্রাঞ্চ গুলো সবগুলাই একটি আরেকটির সাথে সম্পৃক্ত, তার পর ও আমি চেষ্ঠা করব কিভাবে আলাদা আলাদা করে ব্যাপার গুলাকে সহজ করে বুঝানো যায়। রিসার্চ করার জন্য কম্পিউটার সায়েন্স এ প্রচুর টপিক আছে, আমি হয়তবা সবগুলাকে তুলে ধরতে পারব না, যেই টপিক গুলো বর্তমানে অনেক বেশি জনপ্রিয় সেইগুলো নিয়েই কথা বলব।

Artificial Intelligence / কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি?

কম্পিউটার সায়েন্স এর একটি জনপ্রিয় শাখা হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ।কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হল বুদ্ধিমান যন্ত্র নির্মাণের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি । আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কত গুলো বিষয়ের সমষ্টি । তার মধ্যে Natural Language Processing, Knowledge Representation, Automated Reasoning, Machine Learning, Computer Vision, Robotics অন্যতম ।কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence) কম্পিউটার বিজ্ঞানের একটি শাখা, যেখানে মানুষের বুদ্ধিমত্তা ও চিন্তা শক্তিকে কম্পিউটার দ্বারা অনুকৃত করার চেষ্টা করা হয়ে থাকে। এই টপিক টি বর্তমানে হট টপিক গুলোর মদ্ধ্যে অন্যতম। আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর একটি বাস্তবধর্মি উদাহারন হচ্ছে চ্যাটবট। একটি ডিভাইস মানুষের মতন হয়ে আপনার সাথে কথা বলবে। বর্তমানে অনেকগুলো ভালো চ্যাটবট আছে, তার মদ্ধ্যে সবচাইতে পরিচিত গুলো হচ্ছে আইফোন এর সিরি, গুগল এর গুগল এসিস্ট্যান্ট, মাইক্রোসফট এর কর্টানা, ফেইসবুকের ফেইসবুক এম। বর্তমান সময়ে আমাদের চারপাদশে আমরা AI দেখি। AI এর অনেকগুলো ব্রাঞ্চ আছে। এই ছবি টি হচ্ছে Taxonomy of Artificial Intelligence.

সব গুলো ব্রাঞ্চ এর মূল লক্ষ্যই হচ্ছে AI তৈরি করা, এক একটি ব্রাঞ্চ এক এক রকম ভাবে কাজ করে থাকে। আমরা ব্রাঞ্চ গুলো নিয়ে হালকা একটু কথা বলব।

ম্যাশিন লার্নিং

অনেকের ই এই প্রশ্নটি করে থাকে, Machine Learning(ML) আর AI কি এক ই জিনিস? উত্তর হচ্ছে না। মেশিন লার্নিং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের একটা বিভাগ যেখানে ইন্টেলিজেন্ট সিস্টেম তৈরি করা হয় ডেটাসেট কিংবা ইন্টারঅ্যাক্টিভ এক্সপেরিয়েন্সের মাধ্যমে। Machine Learning এর সবচেয়ে বেসিক কাজ হল ডেটা ক্ল্যাসিফিকেশন, যেমন একটা ই-মেইল বা ওয়েবসাইটের কমেন্ট স্প্যাম কিনা তা চেক করা। বর্তমানে ইন্ডাস্ট্রিয়াল লেভেলে মেশিন লার্নিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। কিছু না কিছু মেশিন লার্নিং মেথডলজি জানা সকলেরই উচিৎ। মেশিন লার্নিংয়ের বেশ কিছু জিনিসই ডেটা সায়েন্সের সাথে ওভারল্যাপ করবে, কিন্তু মেশিন লার্নিংয়ের মূল টার্গেট হল প্রেডিক্টিভ মডেল বিল্ড করা। AI ইন্টেলিজেন্ট মেশিন তৈরিতে সাহায্য করে, ML হল AI এর সাবফিল্ড যেটা মেশিনকে কোন কিছু শিখতে সাহায্য করে এবং সর্বশেষ ডেটা সায়েন্স লার্নিং অ্যালগরিদম বেজড মেশিনকে সাহায্য করে ডেটা প্যাটার্ন বের করতে যা সে পরবর্তী কাজে ব্যবহার করতে পারবে।

বর্তমানে Artificial Neural Network বা Deep Learning এর উপরে প্রচুর রিসার্চ চলছে, মূলত Convolution Neural Network এসব ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। নিউরাল নেটওয়ার্ক হচ্ছে মেশিন লার্র্নিং এর একটি এক্সটেন্ডেড অংশ. মানুষের নার্ভ সিস্টেমের নিউরাল নেটওয়ার্ক কে অনুকরণ করে আর্টিফিশিয়াল নিউরাল নেটওয়ার্ক উৎপত্তি। কম্পিউটারকে আরো স্মার্ট, মানুষের ব্রেইন যেভাবে কাজ করে, সেভাবে তৈরি করতে নিউরাল নেটওয়ার্ক সাহায্য করে।

ডেটা সায়েন্স (Data Science)

ডেটা সায়েন্স আসলে পরিসংখ্যান, মেশিন লার্নিং ও ডেটা ভিজুয়ালাইজেশন এর সমষ্টি। একজন ডেটা সায়েন্টিস্টের কাজ হচ্ছে ডেটাসেট এর মাধ্যমে কিছু প্রশ্নের উত্তর খোঁজা। ডাটা সায়েন্স হচ্ছে এরকম একটা বিশেষ জ্ঞান যার মাধ্যমে বিভিন্ন রকমের, গোছালো বা অগোছালো বিশাল পরিমাণ ডাটা থেকে সঠিক এবং অন্তর্নিহিত ব্যবহার উপযোগী তথ্য বের করে আনা যায় (এটাকে অনেকেই ডাটা মাইনিং-ও বলে থাকেন)। পরিসংখ্যান, ডাটা অ্যানালাইসিস ও সে সম্পর্কিত বিভিন্ন মেথডের সমন্বয়ে এমন একটি কনসেপ্ট যার মাধ্যমে কোন ডাটা কালেকশনের মধ্যেকার আসল ঘটনা বা বিষয় বের করে আনা যায়। এই বিজ্ঞান বস্তুত অন্যান্য অনেক ফিল্ড থেকে বিভিন্ন তত্ত্ব এবং টেকনিককে ফলো করে কাজ করে। যেমন - গণিত, পরিসংখ্যান, ইনফরমেশন সায়েন্স, কম্পিউটার সায়েন্স মেশিন লার্নিং, ক্লাস্টার অ্যানালাইসিস, ডাটা মাইনিং, ডাটাবেইজ, ডাটা ভিজুয়ালাইজেশন ইত্যাদি।

ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং

ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং (NLP) হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence)-এর একটি শাখা যা মানুষের ভাষার বিশ্লেষণ করে সেটা বুঝে মানুষ এবং কম্পিউটারের সাথে মিথস্ক্রিয়া (Interaction) করে। এর অন্যতম চ্যালেঞ্জ হচ্ছে কম্পিউটারকে শেখানো যে কিভাবে মানুষ শিখে এবং ভাষার ব্যবহার করে। বিষয়টা কিন্তু অভিধান ব্যবহার করার মত সহজ-সরল কাজ নয়। অনেকসময় দেখা যায় একটি শব্দ ভিন্ন ভিন্ন বাক্যে ভিন্ন ভিন্ন অর্থ বহন করে। যেমনঃ অরুনা ‘ভাল’ রান্না করে (বিশেষণ)। আপন ‘ভাল’ সবাই চায় (বিশেষ্য)। এই দুটি বাক্যতে ভাল শব্দটা আছে কিন্তু বাক্য দুটিতে শব্দটির পদ (Parts of speech) ভিন্ন। এখন কথা হচ্ছে আমরা তো জানি এবং বুঝি বিশেষ্য কী জিনিস, বিশেষণ কী জিনিস। কিন্তু কম্পিউটার তো বুঝে না। তাই কম্পিউটারকে মানুষের ভাষা বোঝানোর জন্য ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং-এর উদ্ভব।

ইমেজ প্রসেসিং

রোবটিক্সে “ভিশন” শব্দটি নিয়ে আজকাল খুব আলোড়ন চলছে। রোবটের বিভিন্ন রকম সেন্সিং এ অনেক ধরনের সেন্সর ব্যবহার করা হয়। রোবটকে মানুষ সেই সব ক্ষমতা দেয়ার চেষ্টা করে যেগুলো মানুষের অনুরূপ। মানুষের মত করেই তাই রোবটকে দৃষ্টি দেয়ার প্রচেষ্টা থেকেই রোবটিক ভিশন এর সূত্রপাত। আর এর সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে আছে ইমেজ প্রসেসিং। মূলত রোবট ক্যামেরা দিয়ে যা দেখে সেটিকে বিশ্লেষণ করে করে সে পথ চলে। অর্থাৎ তাকে পথ চলতে ইমেজ প্রসেসিং করতে হয়। এইটা তো শুধুমাত্র রোবোটিকস এর ক্ষেত্রে ভিশন এর কথা বললাম. ইমেজ প্রসেসিং বর্তমানে সব জায়গায় ব্যবহৃত হয়ে থাকে. একটা ইমেজ বা ছবি কে কিভাবে ম্যানিপুলেট করে সেটাকে রিয়েল লাইফে ব্যবহার করা যায়. ফেইস রিকগনিশন হচ্ছে ইমেজ প্রসেঙ্গ এর একটি অন্যতম বাস্তব উদাহরণ.

সাইবার সিকিউরিটি

ইন্টারনেটে হ্যাকিং বা ম্যালওয়ার অ্যাটাক থেকে বাচতে যেসব ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হয় সেগুলোই সাইবার সিকিউরিটির মধ্যে পরে। ওয়েবসাইট বা সিস্টেমে অবৈধ অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে সাইবার সিকিউরিটি সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। যখন কেউ আপনার কম্পিউটার বা স্মার্টফোনকে বাইরে থেকে অ্যাক্সেস নেয়ার চেষ্টা করবে তবে তা হ্যাকিং এর আওতায় পরে। আর এধরনের জিনিস প্রতিহত করতে সাইবার সিকিউরিটি সম্পর্কে আপনাকে অভিজ্ঞ হতে হবে। সাইবার সিকিউরিটি সম্পর্কে বুঝতে হলে আপনাকে আগে বুঝতে হবে আপনি আসলে কোন ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হতে পারেন। অর্থাৎ কি থেকে আপনাকে সুরক্ষিত থাকতে হবে।

রোবোটিক্স

এই টপিকঃ টি নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলার নেই, কারণ কম আর বেশি সবাই ই এই টপিক টির সাথে,রোবট নিয়ে যে বিজ্ঞান বা শাখার উৎপত্তি তার নাম হচ্ছে রোবটিক্স। রোবট শিল্পে যেটার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তা হচ্ছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স সংক্ষেপে AI । রোবট একটা যন্ত্র। যাকে কোন কাজ বা উদ্দেশ্যে প্রোগাম করলে সে কাজ সুন্দর ভাবে সম্পন্ন করে। রোবট দুই ধরনের হতে পারে, একটা হচ্ছে মেকানিক্যাল আরেকটা হচ্ছে ভার্চুয়াল। এ দুই ধরনের রোবোটের প্রধান উপাদান হচ্ছে একটা মেশিন ও একে কাজে লাগানোর নির্দিষ্ট প্রোগ্রাম। নেটওয়ার্কিং নেটওয়ার্কিং শব্দটি আমাদের সবার কাছেই সুপরিচিত, কিন্তু আমরা অনেকেই এর সঠিক অর্থ জানি না। এটি হচ্ছে একাধিক কম্পিউটারের মধ্যে বিভিন্ন পদ্ধতিতে সংযোগ স্থাপন। এ যোগাযোগব্যবস্থাটি বিশ্বব্যাপী অথবা পাশাপাশি রাখা দুটি কম্পিউটারের মধ্যেও হতে পারে। এর মাধ্যমে সংযুক্ত কম্পিউটারগুলো নিজেদের মধ্যে সব ধরনের ডাটা আদান-প্রদান করতে সম হয়। ফলে যে কোনো কঠিন কাজ একাকী না করে একই সঙ্গে বহুসংখ্যক ব্যক্তির দ্বারা সম্পাদন করা যায়। আর তাই এ পদ্ধতিটি আমাদের অফিস-আদালতগুলোয় প্রতিনিয়ত বিপুল পরিমাণ কর্মঘণ্টা বাঁচিয়ে দিচ্ছে। নেটওয়ার্কিংয়ের মাধ্যমে একটি পিসি থেকে আরেকটি পিসিতে রিসোর্স শেয়ার করা যায়। রিসোর্স মানে হলোÑ তথ্য+হার্ডওয়্যার। নেটওয়ার্কিং যে শুধু মাত্র দুইটা কম্পিউটার এর মধ্যে কানেকশন তাই ই নয়, যে কোন দুইটা ডিভাইস এর মদ্ধকার কমিউনিকেশন ও কিন্তু নেটওয়ার্কিং এর মাধ্যমেই হয়.

ইন্টারনেট অব থিংকস (আইওটি)

আইওটি হল মূলত ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন ডিভাইস সংযুক্ত করা যা মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করবে বা বিভিন্ন কাজে সাহায্য করবে। উদাহরণ হিসেবে স্মার্ট ফ্রিজের কথা বলা যেতে পারে। আইওটি প্রযুক্তি বাস্তবায়ন করা গেলে স্মার্ট ফ্রিজ হবে এমন একটি যন্ত্র যা নিজ থেকেই ভেতরে প্রয়োজনীয় খাদ্য আছে কিনা তা শনাক্ত করতে সক্ষম হবে। এক্ষেত্রে ফ্রিজের ভেতরে ক্যামেরা স্থাপন করা হবে যা ফ্রিজের ভেতরের অবস্থা পরিদর্শন করে গ্রাহককে টেক্সটের মাধ্যমে সামগ্রিক অবস্থা জানাবে। আরও সহজভাবে বলি, ওভেনের কথাই ধরুন আপনি বাসা থেকে বের হওয়ার আগে ওভেনে খাবার রেখে এসেছেন এবং অবশ্যই ওভেনের পাওয়ার অফ ছিল। আপনি বাসায় ফেরার ২০ মিনিট আগে ভাবলেন খাবার গরম করে ফেলবেন যাতে বাসায় ঢুকার পর খাবার গরমে আপনার বাড়তি ২০ মিনিট নস্ট না হয়। আইওটি প্রযুক্তির কল্যানে আপনি আপানার স্মার্ট ফোন থেকে ইন্টারনেট সংযোগের ফলে ওভেন স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু করে আবার ওভেন বন্ধও করে দিতে পারবেন।